Robinson Crusoe - Bangla Summary

Robinson Crusoe - Bangla Summary

Robinson Crusoe - Daniel Defoe - Bangla Summary :

'রবিনসন ক্রুসো' নামে বিখ্যাত উপন্যাসটি রচনা করেন একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী, লেখক, সাংবাদিক, প্যাম্ফলেট রচয়িতা ও গোয়েন্দা 'ড্যানিয়েল ডিফো' Daniel Defoe. এই উপন্যাসটি ১৭১৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটিতে রবিনসন ক্রুসো নামে এক ব্যক্তির কাল্পনিক আত্মজীবনী রচিত হয়েছে। এই ব্যক্তি ভেনেজুয়েলার কাছে একটি নির্জন বিষুবীয় দ্বীপে ২৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করেন। এই সময় আমেরিকার উপজাতীয়, বন্দী ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে তার সংঘর্ষও হয়। পরে তাকে তার স্বজাতি কর্তৃক উদ্ধার করা হয়। রবিনসন ক্রুসো সর্বমোট চারটি সমুদ্র অভিযান (যাত্রা) করেছিল।

Robinson Crusoe - Daniel Defoe - Bangla Summary


Robinson Crusoe - Daniel Defoe - Bangla Summary


রবিনসন ক্রুসো ১৬৩২ সালে ইয়র্ক শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তার বাবা তাকে অনেক লেখাপড়া শিখিয়েছেন এবং তার বাবার ইচ্ছে ছিল আইন পাস করে সে যেন উকিল হয়। তার বাবা সতর্ক করে দিলেন নাবিকের জীবনটা বিপদজনক। পাশাপাশি অনেক যুক্তি দিয়ে বললেন তার বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই রবিনসনের ইচ্ছা ছিল সে নাবিক হবে এবং দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াবে। আর তাই সে তার ইচ্ছা এবং ভাগ্যের সন্ধানে সমুদ্রযাত্রা করবে। কয়েকদিন বাবার কথা মত রবিনসন মেনে চললেও তার সমুদ্র অভিযানের নেশা তার পিছু ছাড়েনি। এমনকি রবিনসন প্রতিজ্ঞা করে বসে সে যেকোনো মূহুর্তে পালিয়ে সমুদ্র যাত্রা করবেই। রবিনসনের বয়স যখন প্রায় ১৯ বছর, তখন সে সমুদ্র যাত্রা করার একটি সুযোগ পায়।

রবিনসন ক্রুসোর প্রথম সমুদ্র যাত্রা

১৬৫১ সালের প্রহেলা সেপ্টেম্বর তার প্রথম সমুদ্র যাত্রা শুরু। রবিনসনের এক বন্ধুর বাবার জাহাজ হাল (Hull) থেকে লন্ডনে যাবে। আর সেই সুবাধে সে তার বন্ধুর কাছ থেকে সমুদ্র যাত্রা করার আমন্ত্রণ পায়। তো সে তার মা-বাবার কথা না শুনে, কাউকে কোনো কিছু না বলে বেশকিছু পাউন্ড নিয়ে বেরিয়ে পড়ল লন্ডনের উদ্দেশে। কিন্তু যাত্রার প্রথম থেকেই তাদের জাহাজে দুর্ভাগ্য দেখা দিল। বন্দর থেকে বেশিদূর না এগোতেই তাদের জাহাজ প্রবল ঝড়ের কলে পড়ে। রবিনসন উত্তাল সাগরের ঢেও দেখে ভয় পেয়ে যায় এবং অসুস্থও হয়ে পড়ে। সাথে সাথে সে প্রতিজ্ঞা করে যে কপাল যদি ভালো থাকে, আর কোনোভাবে নিরাপদে তীরে পৌছাতে পারে, তাহলে সে আর কখনই সমুদ্র যাত্রা করবে না।

দুইদিন পর উত্তাল সমুদ্র শান্ত হলো। ছয়দিন পর তারা ইয়ারমাউথ পৌছায়। কিন্তু বাতাসের বেগ উলটো দিকে হওয়ায় তাদের বন্দরের বাহিরে অবস্থান করতে হল। কিন্তু প্রকৃতি শান্ত না হয়ে ঝড় বইতে শুরু করল এবং অষ্টম দিনে একটি বিরাট ঢেও জাহাজের উপর আছড়ে পড়ল। মালের ভারেই জাহাজ ডুবতে শুরু করল, সেই সাথে ঢেউয়ের পানি তো আছেই। সাহায্যের জন্য জাহাজের ক্যাপ্টেন বার্তা দিল। ভাগ্য ভালো, অন্য একটি জাহাজ যাচ্ছিল ওদের সামনে দিয়ে ওরা ওদের লাইফবোটে সকলকে তুলে নিল। তারপর তারা হেটে হেটে ইয়ারমাউথ শহরে এসে পৌছায়। শহরের মানুষগুলো খুভ ভালো। তারা তাদের সাথে খুভ সুন্দর আচরণ করল এবং পরার জন্য নতুন পোষাক কিনে দিল। বাড়ি ফিরে যেতে বা লন্ডন শহরে যেতে যে টাকা পয়সা লাগবে তাও ব্যবস্থা করে দিল। রবিনসন ক্রুসো তার প্রতিজ্ঞা ভুলে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সে লন্ডন শহরে এসে পৌঁছল।

রবিনসন ক্রুসোর দ্বিতীয় সমুদ্র যাত্রা

লন্ডনে আসার কদিন পরে তার অনেক বন্ধু হল। ঐসব বন্ধুদের একজন আফ্রিকার গিনিগামী জাহাজ ক্যাপ্টেন। ভদ্রলোক জাহাজের ব্যবসা করেন এবং এ কারণে প্রায়ই গিনি উপকূলে যাতায়াত করেন। একদিন তিনিই রবিনসনকে বললেন- ‘তুমি যদি কিছু মনিহারি মালামাল নিয়ে আমার জাহাজে করে গিনি উপকূলে যাও তাহলে মোটা অঙ্কের টাকা লাভ করতে পারবে।’ রবিনসন এই ধরনের কিছু একটা করতে চেয়েছিল। তাই সে লন্ডনের বসবাসরত তার কিছু আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কিছু পাউন্ড ধার করলো এবং সে ঐ পাউন্ড দিয়ে কিছু প্লাস্টিকের খেলনা, কিছু পুঁতির মালা এবং আরও এমন কিছু কিনে নিল যেটি ঐ অঞ্চলের লোকজন পছন্দ করুনবে। এবার ঈশ্বরের নাম নিয়ে গিনির পথে সমুদ্রযাত্রা শুরু হলো।প্রথম যাত্রাতেই ওর মোটামুটি বেশ লাভই হলো। অঙ্কের হিসেবে ৫ পাউন্ডের জিনিস সে বিক্রি করেছে ২০ পাউন্ডে। এবার ওর আনন্দ দেখে কে! লাভ হলো দুরকম- টাকা তো লাভ হলোই, তার নিজের চেষ্টায় জাহাজ চালানোও কিছু শিখে ফেলল। আর তাই রবিনসন ক্রুসো এবার তার ব্যবসায়ের লাভ তার এক বন্ধুভাপান্ন বিধবা নারীর কাছে রেখে দ্বিতীয়বার গিনিতে বাণিজ্য করার উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি নেয়।


রবিনসন ক্রুসোর তৃতীয় সমুদ্র যাত্রা
অল্পতে বেশি লাভের আশায় গিনিতে পরবর্তী যাত্রায় কী ঘটেছিল এবার তার বর্ণনা। গিনি থেকে বাণিজ্য করে ফিরে আসার পথে কয়েকজন মুর জলদস্যু তাদের জাহাজ আক্রমণ করল, এবং তাকে সহ সবাইকে ধরে নিয়ে ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করে দিল। রবিনসনকে সাউথ আফ্রিকার স্যালি (Sallee) শহরের এক মনিবের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। অবশ্য সেই মনিব খুব ভালো ছিল। মনিব ভদ্রলোকের ছিল মাছ ধরার নেশা। মাছ কী করে ধরতে হয় রবিনসন তা ভালো করে জানত এবং সেই একটিমাত্র কারণে রবিনসন মনিবের আরও বেশি প্রিয় হয়ে উঠল। যা হোক, রবিনসন তার মাথা থেকে পালিয়ে যাবার ইচ্ছেটা বাদ দেয়নি। অবশ্য পালিয়ে যাবার পথটা কিছুতেই ঠিক করতে পারছিল না। প্রায় দুই বছর পরে একদিন তার সুযোগ হলো পালানোর। রবিনসন তারই এক সমবয়সী মুর ছেলেকে নিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিল মাছ ধরবে বলে এবং কৌশল করে নৌকাটা একটু গভীর সমুদ্রে নিয়ে মুর ছেলেটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল সমুদ্রে, আর ভয় দেখাল ফিরে না গেলে গুলি করে মারবে। আশ্চর্য ঘটনা হলো, মুর ছেলেটি তাকে ভয় না পেয়ে বরঞ্চ সাহায্য করতে রাজি হলো। ছেলেটিকে রবিনসন আবার নৌকায় তুলে নিল।

আবার যাত্রা শুরু হলো। দুদিন বেশ কষ্ট করে চলার পর একটা পর্তুগিজ জাহাজের দেখা পেল। জাহাজ তাদের কাছে আসতেই তারা জাহাজিদের সব জানাল। জাহাজিরা তাদের তুলে নিল জাহাজে এবং রবিনসনকে এনে নামিয়ে দিল ব্রাজিলের বন্দরে এবং পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন নিজের জন্য মুর ছেলেটিকে ক্রয় করে রেখে দিল। কিছুদিন ব্রাজিলে রবিনসের বেশ সুখেই কাটল। অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করে নিজের অবস্থা ফিরিয়ে এনেছিল রবিনসন। সেখানে রবিনসন একজন উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে সফলতা লাভ করে। সে সময়কার দাস-শ্রম ও তাদের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা জানতে পেরে ক্রুসো আগ্রহী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ছোটবেলা থেকে অস্থিরচিত্ত রবিনসনের মাথায় আবার দুর্বুদ্ধি চাপল। ওখানকার স্থানীয়রা ওকে পরামর্শ দিল আবার গিনির সেই পুরোনো বাণিজ্যটা শুরু করতে। তার তো সমুদ্রযাত্রার পুরোনো নেশা আছেই। তাই ঐসব চিন্তা করেই সে আবার দাস সংগ্রহের জন্যে পশ্চিম আফ্রিকার গিনির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

রবিনসন ক্রুসোর চতুর্থ সমুদ্র যাত্রা

রবিনসন ক্রুসো পুণরায় গিনিতে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ব্রাজিল থেকে তার চতুর্থ সমুদ্র যাত্রা শুরু করল। সমুদ্রযাত্রার প্রথম কয়েকটা দিন বেশ ভালোই যাচ্ছিল, তবে হঠাৎ একদিন উঠল ভীষণ সামুদ্রিক ঝড়। সেই ঝড়ের মধ্যে তাদের জাহাজ ত্রিনিদাদ দ্বীপের কাছে গিয়ে চড়ার বালিতে আটকে গেল। আর তাই জাহাজের তলা গেল ভীষণভাবে ফেঁসে। তবু অনেক ভেবে ওরা জাহাজে রক্ষিত ছোট নৌকায় করে ডাঙায় দিকে রওনা হয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম, প্রচন্ড এক সমুদ্রের ঢেউ এসে ওদের নৌকাটা উল্টে দিল এবং ওরা সবাই ডুবে গেল। রবিনসনের ভাগ্য ভালো বলতে হবে, সে ভেসে উঠল এবং সাঁতার কেটে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় দ্বীপের তীরে পৌঁছল। সেই রাতটা সে বন্য জীবজন্তুর ভয়ে একটা গাছের উপর বসে কাটিয়ে দিল।

পরের দিন ঘুম ভাঙতেই দেখল আকাশ পরিষ্কার, ঝড় উঠেছিল বলে মনেই হয় না। আরও আশ্চর্য, ঝড়ের বেগ ওদের বড় জাহাজটাকে প্রায় ডাঙাতেই নিয়ে এসেছে। রবিনসন ভাবল, আমরা যদি জাহাজেই থাকতাম তাহলে কাউকেই মরতে হতো না। এখন আর ভেবে কী হবে? রবিনসনের খিদেও পেয়েছে প্রচন্ড। সে আবার জাহাজে গিয়ে উঠল- এবং খুঁজে দেখল খাবারগুলো ঠিক আছে কি না। খাবার ঠিকই ছিল। সে বেশ পেট পুরে খেয়ে নিল। তারপর জাহাজ থেকে কয়েকটা তক্তাকাঠ আর ছুতোরের যন্ত্রপাতি তীরে এনে কোনো রকমে রাত কাটানোর মতো একটা মাচা তৈরি করে নিল। তারপর বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল দ্বীপটা ভালো করে দেখার জন্য। কিন্তু পাহাড়ের উপর উঠেই রবিনসনের মনটা দমে গলে। ঈশ্বরই জানেন কতদিন থাকতে হবে এই দ্বীপে।

রাতে অবশ্য কোনো রকম ঝামেলা হলো না। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে রবিন স্থির করুনল, প্রয়োজনীয় যেটি কিছু জাহাজে এখনো ভালো আছে তা সবই নামিয়ে আনতে হবে। সেদিন থেকে সময় পেলেই ভাটার সময় পানি কমতেই সে জাহাজে চলে যেত এবং নামিয়ে আনত প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র। বেশিদিন সময় পেলে রবিনসন হয়তো পুরো জাহাজটাই ডাঙায় তুলে নিয়ে আসত। পারল না, কারণ চৌদ্দ দিনের মাথায় এমন ঝড় উঠল তাতে ঐ ভাঙা জাহাজটা ঝড়ে কোথায় উড়ে গেল তার কোনো চিহ্নও পাওয়া গেল না।

অবশ্য জাহাজ থেকে রবিনসন কম জিনিস নামিয়ে আনেনি। এখন এসব জিনিস রাখবে কোথায় সেটাও এক ভাবনা। অনেক খুঁজে একটা পাহাড়ে ওঠার মধ্যপথে খানিকটা সমতল জায়গা আবিষ্কার করুনল। তার উল্টো দিকে উঠে গেছে একটা খাড়া পাহাড়, সেদিক থেকে কোনো বন্য জানোয়ারের আক্রমণের সম্ভাবনাও খুবই কম। আর বাদবাকি তিনদিকে সে নারকেল পাতা দিয়ে বেশ শক্ত এবং উঁচু করে বেড়া দিয়ে দিল। প্রয়োজন হলে মই লাগিয়ে সে যাতায়াত করত, আর ভেতরে ঢুকেই মইটা তুলে নামিয়ে রাখত মাটিতে। সব জিনিসপত্র রাখল সেখানেই। তৈরি করুনল বড় করে একটা থাকার মতো ছাউনি। তাছাড়া পাহাড়ের একটা অংশে প্রকান্ড এক গর্ত ছিল, সেটাও যোগ করে নিল ঘর হিসেবে।

তার থাকার মতো বাসা তৈরি হয়ে গেল। ভাবল তৈরি করতে হবে কিছু আসবাবপত্র। যদিও এসব তৈরির অভ্যাস তার নেই। যন্ত্র ব্যবহার করতে তার খুব কষ্ট হলো। প্রথমে বন থেকে কাঠ নিয়ে তৈরি করল একটা চেয়ার। তারপর টেবিল, শেলফ, আরও কত কী! একধরনের শক্ত জংলা গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করল একটা কোদাল আর জাহাজের ভাঙা একটা লোহার টুকরু পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করল জ্বালানি কাঠ কাটার কুড়াল। এর মধ্যে ঘটল এক মজার ঘটনা। রবিনসন জাহাজ থেকে নামানো জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতেই পেল একটা ছোট থলে, খুলে দেখল তাতে রয়েছে কতটা তূষ। থলেটা তার দরকার ছিল ভিন্ন কারণে- তাই ঘরের বাইরে এসে তূষগুলো মাটিতে ফেলে দিল।

এর কিছুদিন পরেই নামল বর্ষা এবং বৃষ্টি। বৃষ্টি হবার কয়েক দিন পরেই রবিনসন আশ্চর্য হয়ে দেখল, যে তুষ গুলো সে ফেলেছিল সেখানে অজানা গাছের বেশকিছু অঙ্কুর দেখা দিয়েছে। রবিনসনের খুব আনন্দ হলো। সে কোদাল দিয়ে সামনের আরও কিছু জমি কুপিয়ে তৈরি করে রাখল। একদিন দেখল অংকুরগুলো আসলে ধানগাছের- সাথে যবও আছে।একদিন ধান আর যব গাছগুলো একটু বড় হলে সে তা চষাজমিতে ছড়িয়ে ছড়িয়ে বুনে দিল। কিছুদিনের মধ্যেই ঐ জমি থেকে বেশকিছু ধান ও যব পেল। এবার রবিনসনের ভাবনা- এগুলো মাড়াই করবে কীভাবে? তাছাড়া চাই জাঁতাকল আর রুটি সেঁকবার জন্য তাওয়া। যাই হোক, বুদ্ধিমান রবিনসন শক্ত কাঠ দিয়ে জাঁতা তৈরি করল, আর নরম মাটি থালার মতো পিটিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করল তাওয়া।

এবার বড় সমস্যা হলো পোশাকের! জাহাজে যেটি ছিল তাতে আর কতদিন চলে? সেই বনে তো আর যাই হোক, পোশাক বা তৈরি কাপড় পাওয়া যাবে না। তখন আবার নতুন বুদ্ধি আঁটল রবিনসন- ঘরে রাখা ছিল বেশকিছু শুকনো ছাগলের চামড়া- সে ঐ চামড়া দিয়েই লজ্জা ঢাকার মতো পোশাক তৈরি করে নিল। গালভর্তি দাড়ি-গোঁফ আর তার উপর ছাগলের চামড়ার পোশাক- যেটি একখানা চেহারা হয়েছে রবিনসনের। ওভাবে দেখলে ওর স্বজাতি হয়তো অজ্ঞান হতো কিংবা ধরেই নিত রবিনসন পাগল হয়ে গেছে।

রবিনসনের আরও একটা মজার কথা হলো পৃথিবীর সাথে সম্পর্কহীন এক দ্বীপে বাস করলেও সে দিন-মাস বছরের হিসেব ঠিক ঠিক রেখেছিল। ১৬৫৯ সালের এক সেপ্টেম্বর তারিখে রবিনসনের নৌকোডুবি হয়, যা তার জানা ছিল। তারপর থেকেই রবিনসন প্রতিদিন পাহাড়ের গায়ে পরপর তারিখ লিখে ক্যালেন্ডার তৈরি করে রেখেছিল। প্রত্যেকদিন সকালে উঠে একটা করে তারিখ কেটে দিত সে। ঠিক বর্তমানের ডেটকার্ড বদলানোর মতো। শুধু তা না, তার প্রতিদিনের গৃহস্থালি কাজের সব কিছুই সে লিখে রাখত যেমন কিভাবে সে প্রথম মোম তৈরী করেছিল, কিভাবে সে সৌভাগ্যক্রমে শস্যবীজের অঙ্কুরিত হওয়া আবিষ্কার করে, তার মাটির নিচের ভাড়ার (cellar) তৈরী এবং অন্যান্য সকল কাজ লিখে রাখত। এভাবেই রবিনসনের দিনের পর দিন কাটতে লাগল।

১৬৬০ সালে সে একবার অসুস্থ হয়ে যায় এবং তার মনের অলিক কল্পনায় দেখতে পায় একজন ফেরেশতা তার কাছে এসেছে এবং তার অতীতের পাপ কাজের জন্যে তওবা করতে আদেশ করে। এসময় সে অন্তরে ধর্মীয় আলো উপলব্ধি করে এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যেন তাকে তার পূর্বের পাপের ব্যাপারে ক্ষমা করেছেন এমন অনুভূতি তৈরী হয় তার অন্তরে। সুস্থ হয়ে ক্রুসো পুরো দ্বীপে একটি জরিপ চালায় এবং আবিষ্কার করে সে আসলে একটি দ্বীপে অবস্থান করছে। সে একটি আঙ্গুর গাছে পূর্ণ উপত্যকা আবিষ্কার করে। ক্রুসো আরো বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠে এবং নিজেকে এই দ্বীপের রাজা মনে করতে থাকে। রবিনসন ঐ দ্বীপের মুকুটহীন রাজা। যতদূর দৃষ্টি যায় সবটাই তার রাজত্ব। রবিনসন যখন খেতে বসত তখন তার সব কুকুর বিড়ালগুলো বসত চারপাশে, তা দেখে মনে হতো রবিনসন রাজা আর ওরা সব যেন প্রজা, প্রজারা যেন সব তার করুণা প্রত্যাশী।

সে একটি টিয়া পাখি ও ছাগলকে পোষ মানায় এবং তাদের প্রশিক্ষন দেয়। তারপর সে একটি ছোট নৌকা তৈরী করে দ্বীপের চারদিকে নৌকা দিয়ে ঘুরে দেখার চেষ্ঠা করে করে কিন্তু বিশাল বড় এক ঢেউয়ের আঘাতে সে প্রায় মরতে বসেছিল। আরো একবার প্রাণ ফিরে পাওয়ার জন্যে সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। তীরে পৌঁছলে তার পোষা টিয়া পাখি তার নাম ধরে ডাকে। এভাবে শান্তিতেই আরো কয়েকটি বছর পার করে দেয়। কিন্তু এভাবে বেশিদিন কাটল না, কিছুদিনের মধ্যেই দেখা দিল নতুন এক অশান্তি।

একদিন সে সৈকতে মানুষের পায়ের ছাপ দেখে একটা ধাক্কা খায়। প্রথমে সে ভাবে এগুলো হয়তো শয়তানের পায়ের ছাপ।  কিন্তু কোথাও জন মানব নেই, এই ছাপ এল কীভাবে, চিন্তা ওখানেই। কোনো কিছুর সন্ধান পেল না বলেই ওর ভীষণ ভয় হলো। শেষে এমন হলো, দিনে ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করলেও রাতে ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখল, কিছু লোক ওকে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসছে। অবশ্য ওর ঘর খুব মজবুত করে তৈরি। তবুও রবিনসন আবার দ্বিগুণ দেয়াল তৈরি করলো, যাতে করে ওর ঘর শত্রুর কাছে দুর্ভেদ্য হয়। অবশ্য তাতেও রবিনসনের পুরো ভয় কাটল না। অবশেষে সে সিদ্ধান্তে আসে এগুলো আসলে নরখাদকদেরই পায়ের ছাপ, কারন অতীতে সে শুনেছিল এই এলাকায় নরখাদক আছে। অস্রে সজ্জিত হয়ে সে নরখাদকদের খুজতে থাকে। তার ছাগলগুলোকে মাটির নিচের ঘরেই পালন করতে থাকে এবং সেখানেই খাবার রান্না করার ব্যবস্থা করে। 

যাই যাই করে এভাবে কেটে গেল প্রায় দুটি বছর। রবিনসন এখন সেসব ভয়ের কথা প্রায় ভুলেই বসেছে। এমনি এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে যেতেই দেখতে পেল পাঁচখানা নৌকা সাগরের তীরে বাঁধা। আরও স্পষ্ট করে দেখার জন্য রবিনসন পাহাড়ের উপর উঠল। সেখানে থেকে যেটি দেখল, তাতে ওর হাত-পা ভয়ে ঠান্ডা হয় আর কি! রবিনসন দেখল প্রায় জনা ত্রিশেক নরখাদক বিরাট এক আগুনের কুন্ডলীর চারদিকে ঘুরে ঘুরে নাচছে এবং বিদঘুটে আর বীভৎস রকমের চিৎকার করুনছে। একটু পরেই নরখাদকরা দুজন লোককে তাদের সেই নৌকা থেকে টানতে টানতে তীরের বালিতে নামিয়ে নিয়ে এল।

একজনকে তো সাথে সাথেই মেরে ফেলল। আর অন্যজন তাদের একটু অসাবধানতার বাধন খুলে দৌড় দিল। তিন জন লোক ছুটল ওর পিছু পিছু ওকে ধরতে। কিন্তু লোকটি ছুটছে প্রাণের দায়ে, তার সাথে ওরা পারবে কেন? ঐ লোকটি সোজা ছুটে আসছিল, রবিনসন ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে বসে সব দেখছে। প্রথমে ওর ভীষণ ভয় হয়েছিল। কিন্তু যখন দেখল ওদের মধ্যে একজন ফিরে যাচ্ছে তখন রবিনসন বাকি দুজনের হাত থেকে ওকে বাঁচাবে স্থির করলো। ওর হাতে ছিল বন্দুক, মধ্যে একটা লোক, রবিনসনের নাগালের মধ্যে আসতেই কষে দিল এক ঘা। সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল। এদিকে অন্য লোকটি রবিনসনকে নিশানা করে তীর ছুড়ছে দেখেই বাধ্য হয়ে সে গুলি করলো। দ্বিতীয় লোকটি মারা গেল।

যারা তিনজন এসেছিল ওদের তো ব্যবস্থা ভালোই হলো। কিন্তু রবিনসনের বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে এবার যাকে সে বাঁচাল সে-ই ওঠে ভয়ে দিল ভোঁ দৌড়। অতি কষ্টে রবিন ওকে দৌড়ে ধরে আনল এবং তার ভয় ভাঙিয়ে দিল। তখন লোকটি বারবার ওর পায়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানাল। রবিনসন ওকে এবার নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। কিছু খেতেও দিল, তারপর বিছানা দেখিয়ে বলল ঘুমোতে। লোকটি ভয়ে, ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিল, এবার ঘুমিয়ে একটু সুস্থ হয়ে উঠেই আবার সে রবিনসনের পা নিজের মাথায় রেখে ওদের প্রথা মতো বশ্যতা মেনে নিল। এই পুরো ঘটনাটাই ঘটেছিল ইংরেজী ফ্রাইডে, মানে শুক্রবার। তাই রবিনসন ওর নাম রাখল ফ্রাইডে।

এতদিন রবিনসন ক্রুসো ছিল একা দ্বীপবাসী। এবার তার সাথি হলো। বুদ্ধিমান ও উৎফুল্ল স্বভাবের ফ্রাইডে কথা বলতে জানত না- তাকে খুব যত্ন করে রবিনসন কিছু ইংরেজি শব্দ এবং ধর্মীয় জ্ঞান শেখাল। ফ্রাইডে তাকে জানায় নরখাদকরা কয়েকটি জাতীতে বিভক্ত এবং তারা তাদের শত্রুদের মাংস খায়। ফ্রাইডে আরো জানায় নরখাদকরা তাকে ভাঙ্গা জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছে। জাহাজটি ছিল স্প্যানিশদের (Spaniard) যারা কাছে কোন দ্বীপে বাস করে। এমনিতে ফ্রাইডের মাথা খুব পরিষ্কার, যাকে বলে শার্প। সে অল্পদিনের মধ্যেই সব কাজকর্ম শিখে নিল। তাছাড়া তার মনিবের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা দেখে রবিনসন খুবই মুগ্ধ হয়। তাইতো পরবর্তী জীবনে রবিনসন ক্রুসো বারবার বলত- ‘অমন বিশ্বাসী ভৃত্য বোধ হয় কেউ কোনোদিন পায়নি, যেমনটি ছিল ফ্রাইডে’ এভাবে এই নিঝুম দ্বীপে কেটে গেল সাতাশটি বছর। এই সাতাশ বছরে রবিনসনের আরও দুজন সঙ্গী হলো, তারা কী করে হল শুনা যাক!

একদিন তারা নরখাদকদের দেশ দেখার জন্যে দুজনে মিলে একটি নৌকা তৈরী করে। রওনা দেয়ার আগে তারা দেখতে পায় সমুদ্রতীরে তিন খানা নৌকা। রবিনসন দূরবীন দিয়ে দেখল, আগের মতোই কয়েকজন নরখাদক দুই জন লোককে বেঁধে রেখেছে, প্রহার করছে এবং আয়োজন চলছে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলবার। এই দুই জনের একজনের গায়ে ইউরোপিয়ান পোষাক পরিহিত মানে স্পেনিশ এবং আর একজনকে দেখে ফ্রাইডে আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তখন রবিনসন আর ফ্রাইডে বন্দুক নিয়ে তাদের আক্রমণ করল। এতে মাত্র চারজন ছাড়া সবাইকে মেরে ফেলল তারা দুজনে। বাকি চারজন আধমরা অবস্থায় কোনোরকমে তাদের এক নৌকা নিয়ে পালাল। ফ্রাইডে এবং রবিনসন তখন বন্দি দুজনকে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে সুস্থ করে তুলল। এদের একজন স্পেন দেশের লোক আর অন্যজন ফ্রাইডের স্বজাতি। ফ্রাইডে কিন্তু তাকে দেখেই চুমুতে চুমুতে গাল ভরে ফেলল এবং অস্থির করে তুলল লোকটিকে। পরে জানা গেল ঐ লোকটি আসলে ফ্রাইডের বাবা।

তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠলে তাদের কাছ থেকে রবিনসন জানতে পারল ডাঙার কাছেই একটা জাহাজডুবি হয়েছে, তাতে কয়েকজন স্প্যানিশ এবং কয়েকজন পর্তুগিজ আছে। তাদের না আছে অস্ত্র, না আছে কোনো যন্ত্রপাতি। রবিনসন তাদের সব কথা শুনে নিজের দ্বীপে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে সম্মত হল, কিন্তু শর্ত দিল যে, তারা এখানে সবাই রবিনসনের বশ্যতা স্বীকার করে নেবে এবং কখনো কেউ রবিনসনের বিরোধিতা করবে না। এই শর্তের কারণটাও রবিনসন তাদের বুঝিয়ে বলল, তা হলো, মানুষের সাধারণত স্বভাব হচ্ছে এমন, বিপদের সময় যে উপকার করে, বিপদ কেটে গেলে উপকারীর অপকার করতে ঐ মানুষের মনে বাধে না। এ ক্ষেত্রে বনের পশু বরং উত্তম প্রাণী। রবিনসন আর ফ্রাইডে ঐসব লোকদেরকে দ্বীপে আনার জন্য একটা নৌকাতে ছাউনি তৈরি করল, সাথে রইল খাবার পানি। তারপর সেই নৌকা করেই ফ্রাইডের বাবা আর স্প্যানিশ লোকটি ঐ অভাগাদের উদ্ধারে যাত্রা করল।

আট দিন পরে দ্বীপের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা একটি ইংরেজ জাহাজ দেখে ফ্রাইডে এসে রবিনসনকে খবর দিল যে দূরে আবারো একটা জাহাজ দেখা যাচ্ছে। রবিনসন খবরটা পেয়ে বেশ খুশিই হলো- তবুও মনের সন্দেহ দূর করতে কী উদ্দেশ্যে জাহাজটি এদিকে আসছে বুঝতে না পেরে আড়াল থেকে ব্যাপারটা পরখ করতে লাগল। ভাবখানা এই, দেখাই যাক না- কী হয়। জাহাজ তীরের কাছে এসে নোঙর ফেলল, তারপর ঐ জাহাজের লোকেরা নৌকা করে এসে দ্বীপে নামল। আরও একটু সতর্কভাবে দেখে রবিনসন বুঝতে পারল ওরা সবাই শ্বেতাঙ্গ- ইংরেজ, তার স্বজাতি। আর ১১ জন লোক তিনজন বন্দিকে ধরে নিয়ে আসছিল, যাদের হাত-পা বাধা। ১১ জনের মাঝে দুই জনকে বন্দি পাহারায় রেখে বাকিরা দ্বীপ দেখার জন্যে বের হয়। ফ্রাইডে এবং ক্রুসো দুই বিদ্রোহীকে আটক করে তাদের তিনজনকে মুক্ত করে। তাদের একজন হল জাহাজের ক্যাপটেন। আর বাকি দুইজনের একজন হল জাহাজের ফার্স্ট মেট এবং একজন সাধারন যাত্রী ও ক্যাপ্টেনের অনুগত।

রবিনসন তাদের বন্দিত্বের কারণ জানতে চাইলে ওরা বুঝতেই পারছিল না ওরা কোন জাতির লোক, কারণ কেউ কথার উত্তর দিচ্ছিল না। অবশ্য শেষে বুঝতে পারল ওরা রবিনসনেরই স্বজাতি। তাই তারা জানাল, জাহাজের খালাসিরা ষড়যন্ত্র করে ক্যাপ্টেন আর মেটদের বন্দি করেছে। ওরা আসলে বিদ্রোহী। ওদের ইচ্ছে তাদের এই নিঝুম দ্বীপে ফেলে জাহাজ নিয়ে পালাবে। রবিনসন ও ফ্রাইডে তাড়াতাড়ি তাদের বাঁধন খুলে দিল এবং তিনজনের হাতে তিনটি বন্দুক দিল আত্মরক্ষার জন্য।জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে ক্রুসোর একটি চুক্তি হয়, তারা তাকে দ্বীপের শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নিবে এবং তাদের দুই জনকে (ক্রুসো ও ফ্রাইডে) ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে সাহায্য করলে, ক্রুসো তাদেরকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করবে। ক্যাপ্টেন তাদেরকে বাচানোর জন্যে ক্রুসোকে ঈশ্বরের প্রেরিত ফেরেশতা/দূত হিসেবে আখ্যায়িত করে।

তারপর পাঁচজন মিলে বাকি বিদ্রোহীদের খুঁজে বের করল। এরপর ক্যাপ্টেন তাদের সাথে ভান করে বলে যে এটা আসলে একটা টেরিটরি। এর শাসনকর্তা হল ক্রুসো। দ্বীপের মাঝে একটা দূর্গে তার অনুগত ৫০ জনের একটা বাহিনী রয়েছে। ক্যাপ্টেন আরও জানায় যে তাদের জাহাজে বিদ্রোহীদের নেতাসহ আরো ২৬ জন রয়েছে। তারপর বিদ্রোহীদের খুজ না পেয়ে আরও আট নাবিক এসেছিল এবং একজন ছাড়া বাকি সবাইদের জীবিত আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করে। আটক কৃতদের মধ্যে তিনজন ছিল ক্যাপ্টেনের অনুগত। বিপদে পড়ে তারা বিদ্রোহীদের দলে ভিড়েছিল। তাদের নিয়ে আটজনের দল গঠন হল। কিন্তু বিদ্রোহীদের নেতা ছিল জাহাজে। তাকে কিভাবে গ্রেফতার করা যায় সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হল আটককৃতদেরকে একটা প্রস্তাব দেয়া হবে। 

সেটা হল তারা জাহাজ উদ্ধারে তাদেরকে সাহায্য করবে। তাহলে ক্যাপ্টেন দেশে ফিরে তাদের মৃত্যুদন্ড (বিদ্রোহের শাস্তি) লাঘবের জন্যে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। প্রস্তাবে তারা রাজি হলে সবাই মিলে জাহাজ উদ্ধারে গেল। পরদিন রাতে তারা জাহাজে গিয়ে সবাইকে আস্তে আস্তে আটক করে কিন্তু সর্বশেষ যখন বিদ্রোহীদের নেতার রুমে যায় সে ক্যাপ্টেনের উপর হামলে পরে কিন্তু ক্যাপ্টেনের গুলি তার মাথা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। এভাবে রবিনসন ক্রুসোর জন্যে শুধু তাদের প্রাণই বাঁচাল না, বরং জাহাজটি পর্যন্ত ফিরে পেল। পরে সকালে জাহাজ থেকে খাবার এনে একটা ভোজসভা করা হয়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ক্রুসো দেশী পোষাক পরতে পারে। এতো বড় এক বিপদ থেকে উদ্ধার লাভের কারনে তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিকট বারবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে থাকে।

অবশেষে ১৬৮৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর, রবিনসন ক্রুসো স্প্যানিশদের জন্যে অপেক্ষা না করে, যা-কিছু ব্যবহারের জিনিসপত্র ছিল সব গুছিয়ে রেখে সেগুলো তাদের ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়ে একটা চিঠি লিখে রেখে ফ্রাইডেকে নিয়ে জাহাজে উঠল এবং দেশের জন্যে রওয়ানা হল। দীর্ঘর আটাশ বছর পরে এই এতদিনের অজানা দ্বীপ ছেড়ে রবিনসন ক্রুসো দেশের দিকে চলল এবং পঁয়ত্রিশ বছর পরে আবার দেশের মাটিতে পা দিল। তার দুই বোন ছাড়া পরিবারের সবাই মারা গিয়েছিল। তার সেই বিধবা বান্ধবিটি তার সম্পদ নিরাপদেই সংরক্ষন করেছিল।

লিসবন ঘুরে সে তার পর্তুগিজ বন্ধুর কাছে যায়। যে তার উপনিবেশটিকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। ক্রুসো তার সমস্ত জমি বিক্রি করে দেয়। সে তার বিধবা বান্ধবি ও দুই বোনকে সম্পদের একটা অংশ দান করে দেয়। আবার ব্রাজিল যাওয়ার ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্যাথলিক হওয়ায় সে ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। বিয়ে করে এবং এক সময় তার স্ত্রী মারা যায়। এবার ১৬৯৪ সালে আবার ইস্ট ইন্ডিজের দিকে ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা করে। সে তার দ্বীপে আবার ভ্রমন করে। সেখানে গিয়ে দেখে সেই স্প্যানিশরা খুব সুন্দরভাবেই সেটা পরিচালনা করছে এবং এটি এখন উন্নয়নশীল একটা উপনিবেশে পরিণত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments